"আবারো পেক্ট্রল বোমায় ঝরে গেল প্রাণ"
লেখকঃ Jubayer Hosen Jr.
সকাল ৯ টা বাজে ।এখনও বিছানায় ঘুমিয়ে আছে জুবায়ের ।প্রতিদিন সকাল সকাল প্রাইভেট,স্কুল যেতে হয় তাকে ।তাই এত সময় ঘুমানোর সুযোগ জোটে না ।কিন্তু গতরাত একটু বেশি জেগেছে আর আজ তো শুত্রবার ।তাই এখনও ঘুম ভাঙ্গেনি।
এমন সময় কানের কাছে কেমন একটা শব্দ হতে লাগল ।কি অদ্ভুদ শব্দ কিন্তু ঘুমের ঘোরে টের পেলনা সে ।এক লাফ দিয়ে উঠে বসল ।
চোখ খুলেই দেখে স্বাধীন ।শব্দটা তার ফোনের একটা রিংটন ছিল ।<br><br>ও হে স্বাধীন ওর বন্ধু ।তারা খুব ছোট বেলা থেকেই একসাথে থাকে ।খুব ভাল বন্ধু যেন মায়ের পেটের ভাই ।দুই জন দুই জনকে খুব ভালবাসে ।এই রকম বন্ধু খুব কমই চোখে পরে ।
--কি রে এত বেলা হয়েছে এখনও ঘুম পারবি ? আর কয়েক দিন পর তো এস.এস.সি পরীক্ষা ।তোর যে কোন মাথা বেখাই নেই । টেস্ট পরিক্ষার রেজাল্ট টা তো খারাপ করেছিস ।
একের পর এক কথা বলতেই আছে স্বাধীন । কিন্তু জুবায়ের এখনও ঘুমের ঘোরে । হয়ত সব কথা শুনতেই পেল না ।
স্বাধীন খুব ভাল ছাত্র ।আর জুবায়ের তার এত ভাল বন্ধু বলে সব সময় তাকে উপদেশ দেয় ।কিন্তু কি হবে ?
সেই ছোট বেলা থেকেই এই উপদেশ কিন্তু কিছুতেই ভাল করতে পারল না জুবায়েরকে ।সে সব কিছু হালকা ভাবে নেয় ।
জুবায়ের ধনী ঘরের সন্তান ।যদিও সে এই নিয়ে কোন মাথা বেঁথা নেই ।কিন্তু ভবঘুরে ।সব সময় বন্ধুদের সাথে আড্ডা রাত জেগে ফেসবুক চালানো তার প্রতিদিনের রুটিন ।
হঠাত্ স্বাধীন তার পিঠে জোরে একটা থাবা দিল ।
---এতক্ষণ ধরে কথা বলছি আর তুই কোন রাজ্যে গেছিস বলত ?
ততক্ষণাত্ তার হুস হোল ।
---কি বলবি ? এত সকালে ডাকা ডাকি কেন ?
---তোর কাছে পুরো দিনটাই সকাল ।যাই হোক তোর পদার্থবিঞ্জান নোটটা দে ।কাল এসে দিয়ে যাব ।
---ও তাহলে এই বেপার ।তাই তো বলি কেন এই সময় তোর আগমন?
জুবায়ের তাকে পড়ার টেবিল থেকে নোটটা দিল ।নিয়ে যাওয়ার সময় স্বাধীন বললঃ
---পরিক্ষা দিন কিন্তু একসাথে যাব ।দেশের অবস্থা ভাল যাচ্ছে না ।হরতাল অবরোধ লেগেই আছে ।
জুবায়ের হেসে বললঃ
---ঠিক আছে পরিক্ষা দিতে যাওয়ার সময় তোকে সিংড়া বাসস্টেশন পেট্রলবোমার সাথে বেধে দিব ।
বলতেই দুইজন হাসতে থাকল ।
স্বাধীন বললঃ
---ঠাট্রা বাদ দে আমি এখন গেলাম ।
---হুম তাহলে যা ।
চলে গেল স্বাধীন ।২ তারিখ পরিক্ষা শুরু হবার কথা কিন্তু হরতালের কারণে পিছিয়ে গেল ।আর পরিক্ষা শুরু হতে হতে শুত্রবার আসল ।
স্বাধীনকে জুবায়েরের বাড়ির পাশ দিয়ে যেতে হবে পরিক্ষার কেন্দ্রে ।তাই সে এসে জুবায়েরকে ডাক দেয় পরিক্ষার দিন ।
জুবায়ের বাসা থেকে বেড়িয়ে আসে ।আর একটা রিকশা ডাকতে চায় । কারণ,সে হাটার পাত্র নয় কিন্তু স্বাধীন তাকে বাধা দিল ।বললঃ
--- ৫ মিনিটের পখ রিকশার দরকার নেই ।
তাই তারা হেটেই রওনা দিল ।কিছু দুর যেতেই .জুবায়ের বললঃ
---দোস্ত কলম ফেলে এসেছি ।
স্বাধীন তো রেগে খুন ।
---পরিক্ষার দিনও তুই কলম ফেলে এলি ।তোকে আমি আর কিছু বলব না যা ইচ্ছা কর ।
তখন জুবায়ের তাকে বললঃ
---যাক বাসস্টেশন থেকে কিনে নিলেই হবে ।বাসস্টেশনে আসতেই স্বাধীন বললঃ
---যা আমি এখানে দাড়াই তুই কোন এক দোকান থেকে কলম কিনে নিয়ে আয় ।.জুবায়ের তার কথা মত একটা দোকানে কলম কিনতে চলে যায় ।
হঠাত্ জোরে একটা বিস্ফোরনের শব্দ তার কানে আসে ।
---কি হল ! .বলেই পেছনে তাকায় সে ।অনেক মানুষ মুহূর্তেই একজায়গায় জোরো হয়ে গেছে ।ছুঁটে যায় জুবায়ের । সকল মানুষকে পাশ কাটিয়ে সামনে গিয়ে দাড়ায় ।
---একি স্বাধীন ।
স্বাধীন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে ।প্রেট্টল বোমায় দঘ্ন হয়ে গেছে তার শরীর ।
জুবায়ের কি করবে বুঝতে পারছে না ।দেখেই তার মাথা ঘুরে গেল ।ততক্ষণাত্ সে কিছু লোক নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গেল স্বাধীনকে ।
পরিক্ষার কথা হয়ত ভুলেই গেছে জুবায়ের ।আর মনে থাকলেই বা কি করার পরিক্ষার চেয়ে তার বন্ধুই তার কাছে বেশি দামী ।যে তার ছোট্ট বেলা থেকে এত কাছের এত প্রিয় ।
হাসপাতালে ভর্তি করা হলো স্বাধীনকে ।বাহিরে একটা চেয়ারে এসে বসল জুবায়ের ।চোখ মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না ।শীতের দিন তবুও ঘাম দিয়ে আসছে তার শরীর ।
কিছুক্ষণ পর ডাক্তার বেড়িয়ে এল স্বাধীনের রুম থেকে ।.এক দৌড় দিয়ে ডাক্তারের কাছে গেল জুবায়ের ।
---ডাক্তার সাহেব কি অবস্থা আমার বন্ধুর ।সে ভালো হয়ে যাবে তাই না ।
কিন্তু ডাক্তার বিষণ্ন মনে বললঃ
---সে আর নেই ।
কথাটা শুনতেই জুবায়ের থম হয়ে দাড়িয়ে গেল ।চোখে নেমে এল বৃষ্টি ।যে বৃষ্টির পানি ছাতা দিয়ে আড়াল করা যায় না ।
লেখকঃ কি হচ্ছে দেশে ?.এই জন্যই কি ত্রিশ লক্ষ মানুষ প্রাণ দিয়েছিল ?.কবে দূর হবে এই অশান্তির পাহাড়...... ?
Jubayer Hosen Jr.
লেখকঃ Jubayer Hosen Jr.
সকাল ৯ টা বাজে ।এখনও বিছানায় ঘুমিয়ে আছে জুবায়ের ।প্রতিদিন সকাল সকাল প্রাইভেট,স্কুল যেতে হয় তাকে ।তাই এত সময় ঘুমানোর সুযোগ জোটে না ।কিন্তু গতরাত একটু বেশি জেগেছে আর আজ তো শুত্রবার ।তাই এখনও ঘুম ভাঙ্গেনি।
এমন সময় কানের কাছে কেমন একটা শব্দ হতে লাগল ।কি অদ্ভুদ শব্দ কিন্তু ঘুমের ঘোরে টের পেলনা সে ।এক লাফ দিয়ে উঠে বসল ।
চোখ খুলেই দেখে স্বাধীন ।শব্দটা তার ফোনের একটা রিংটন ছিল ।<br><br>ও হে স্বাধীন ওর বন্ধু ।তারা খুব ছোট বেলা থেকেই একসাথে থাকে ।খুব ভাল বন্ধু যেন মায়ের পেটের ভাই ।দুই জন দুই জনকে খুব ভালবাসে ।এই রকম বন্ধু খুব কমই চোখে পরে ।
--কি রে এত বেলা হয়েছে এখনও ঘুম পারবি ? আর কয়েক দিন পর তো এস.এস.সি পরীক্ষা ।তোর যে কোন মাথা বেখাই নেই । টেস্ট পরিক্ষার রেজাল্ট টা তো খারাপ করেছিস ।
একের পর এক কথা বলতেই আছে স্বাধীন । কিন্তু জুবায়ের এখনও ঘুমের ঘোরে । হয়ত সব কথা শুনতেই পেল না ।
স্বাধীন খুব ভাল ছাত্র ।আর জুবায়ের তার এত ভাল বন্ধু বলে সব সময় তাকে উপদেশ দেয় ।কিন্তু কি হবে ?
সেই ছোট বেলা থেকেই এই উপদেশ কিন্তু কিছুতেই ভাল করতে পারল না জুবায়েরকে ।সে সব কিছু হালকা ভাবে নেয় ।
জুবায়ের ধনী ঘরের সন্তান ।যদিও সে এই নিয়ে কোন মাথা বেঁথা নেই ।কিন্তু ভবঘুরে ।সব সময় বন্ধুদের সাথে আড্ডা রাত জেগে ফেসবুক চালানো তার প্রতিদিনের রুটিন ।
হঠাত্ স্বাধীন তার পিঠে জোরে একটা থাবা দিল ।
---এতক্ষণ ধরে কথা বলছি আর তুই কোন রাজ্যে গেছিস বলত ?
ততক্ষণাত্ তার হুস হোল ।
---কি বলবি ? এত সকালে ডাকা ডাকি কেন ?
---তোর কাছে পুরো দিনটাই সকাল ।যাই হোক তোর পদার্থবিঞ্জান নোটটা দে ।কাল এসে দিয়ে যাব ।
---ও তাহলে এই বেপার ।তাই তো বলি কেন এই সময় তোর আগমন?
জুবায়ের তাকে পড়ার টেবিল থেকে নোটটা দিল ।নিয়ে যাওয়ার সময় স্বাধীন বললঃ
---পরিক্ষা দিন কিন্তু একসাথে যাব ।দেশের অবস্থা ভাল যাচ্ছে না ।হরতাল অবরোধ লেগেই আছে ।
জুবায়ের হেসে বললঃ
---ঠিক আছে পরিক্ষা দিতে যাওয়ার সময় তোকে সিংড়া বাসস্টেশন পেট্রলবোমার সাথে বেধে দিব ।
বলতেই দুইজন হাসতে থাকল ।
স্বাধীন বললঃ
---ঠাট্রা বাদ দে আমি এখন গেলাম ।
---হুম তাহলে যা ।
চলে গেল স্বাধীন ।২ তারিখ পরিক্ষা শুরু হবার কথা কিন্তু হরতালের কারণে পিছিয়ে গেল ।আর পরিক্ষা শুরু হতে হতে শুত্রবার আসল ।
স্বাধীনকে জুবায়েরের বাড়ির পাশ দিয়ে যেতে হবে পরিক্ষার কেন্দ্রে ।তাই সে এসে জুবায়েরকে ডাক দেয় পরিক্ষার দিন ।
জুবায়ের বাসা থেকে বেড়িয়ে আসে ।আর একটা রিকশা ডাকতে চায় । কারণ,সে হাটার পাত্র নয় কিন্তু স্বাধীন তাকে বাধা দিল ।বললঃ
--- ৫ মিনিটের পখ রিকশার দরকার নেই ।
তাই তারা হেটেই রওনা দিল ।কিছু দুর যেতেই .জুবায়ের বললঃ
---দোস্ত কলম ফেলে এসেছি ।
স্বাধীন তো রেগে খুন ।
---পরিক্ষার দিনও তুই কলম ফেলে এলি ।তোকে আমি আর কিছু বলব না যা ইচ্ছা কর ।
তখন জুবায়ের তাকে বললঃ
---যাক বাসস্টেশন থেকে কিনে নিলেই হবে ।বাসস্টেশনে আসতেই স্বাধীন বললঃ
---যা আমি এখানে দাড়াই তুই কোন এক দোকান থেকে কলম কিনে নিয়ে আয় ।.জুবায়ের তার কথা মত একটা দোকানে কলম কিনতে চলে যায় ।
হঠাত্ জোরে একটা বিস্ফোরনের শব্দ তার কানে আসে ।
---কি হল ! .বলেই পেছনে তাকায় সে ।অনেক মানুষ মুহূর্তেই একজায়গায় জোরো হয়ে গেছে ।ছুঁটে যায় জুবায়ের । সকল মানুষকে পাশ কাটিয়ে সামনে গিয়ে দাড়ায় ।
---একি স্বাধীন ।
স্বাধীন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে ।প্রেট্টল বোমায় দঘ্ন হয়ে গেছে তার শরীর ।
জুবায়ের কি করবে বুঝতে পারছে না ।দেখেই তার মাথা ঘুরে গেল ।ততক্ষণাত্ সে কিছু লোক নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গেল স্বাধীনকে ।
পরিক্ষার কথা হয়ত ভুলেই গেছে জুবায়ের ।আর মনে থাকলেই বা কি করার পরিক্ষার চেয়ে তার বন্ধুই তার কাছে বেশি দামী ।যে তার ছোট্ট বেলা থেকে এত কাছের এত প্রিয় ।
হাসপাতালে ভর্তি করা হলো স্বাধীনকে ।বাহিরে একটা চেয়ারে এসে বসল জুবায়ের ।চোখ মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না ।শীতের দিন তবুও ঘাম দিয়ে আসছে তার শরীর ।
কিছুক্ষণ পর ডাক্তার বেড়িয়ে এল স্বাধীনের রুম থেকে ।.এক দৌড় দিয়ে ডাক্তারের কাছে গেল জুবায়ের ।
---ডাক্তার সাহেব কি অবস্থা আমার বন্ধুর ।সে ভালো হয়ে যাবে তাই না ।
কিন্তু ডাক্তার বিষণ্ন মনে বললঃ
---সে আর নেই ।
কথাটা শুনতেই জুবায়ের থম হয়ে দাড়িয়ে গেল ।চোখে নেমে এল বৃষ্টি ।যে বৃষ্টির পানি ছাতা দিয়ে আড়াল করা যায় না ।
লেখকঃ কি হচ্ছে দেশে ?.এই জন্যই কি ত্রিশ লক্ষ মানুষ প্রাণ দিয়েছিল ?.কবে দূর হবে এই অশান্তির পাহাড়...... ?
Jubayer Hosen Jr.
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন