শুক্রবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৫

চলনবিলের নিরব কান্না


___ গল্পঃ চলনবিলের নিরব কান্না ___
লেখকঃ Jubayer Hosen Jr.
.
বর্ষা কালে চলনবিলে যে পরিমান পানি আর ঢেউ হয় তাতে সেটা দেখতে এক প্রকার সমুদ্রের মতই লাগে ।চারদিকে শুধু পানি আর পানি ।বিলের কিনারায় এসে পড়ে বড় বড় ঢেউ ।
.
আর এই কারনেই আতঙ্কে থাকে ছকু মিয়া ।তার ছোট্ট কুঁড়ে ঘর যে এই বিলের ধারেই ।কখন যে একটা বড় ঢেউ আসবে আর তার ঘরটা পানিতে মিলিয়ে যাবে বলা যায় না ।
.
ছকু মিয়া গরিব একজন জেলে ।সারা দিন ছোট্ট একটা নৌকায় জাল নিয়ে ঘুরে বাড়ায় এই বিলে ।সাথে থাকে তার ছেলে সাজু ।বয়স ৭বছর ।যদিও ক্লাস ট্রুতে পড়ে কিন্তু একে পড়া বলে না ।বাবার সাথে মাছ ধরতেই সময় যায় । তার উপর দারিদ্রতা ।
.
ছকু মিয়া ছেলেকে তেমন যত্ন করতে না পারলেও ছেলের এক গাল হাসি মুগ্ধ করে তাকে ।কিন্তু এই রোগাপটকা চেহারা দেখে ভয়ও হয় বাবার ।ছোটবেলায় মরতে মরতে বেঁচে গেছে সজিব, কালা জ্বর থেকে ।
.
সেই দিন বাড়িতে পৌছানোর আগেই এসে গেল বৃষ্টি ।বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বাসায় আসে ছকু ও তার ছেলে ।আর বাসায় আসলে ছকুর বাসায় প্রতিদিন যে আওয়াজটাঃ -
---সজিবের মা কই গেলা এই দিকে আহো ।সজিবরে আর আমারে দুইটা রুটি দেওছেন ।সারা দিন ছেরাডা কিছু খায়নাই ।
.
ছকুর বউ ঘর থেকে রুটি এনে বারান্দায় পাটি বিছিয়ে খেতে দেয় তাদের ।
.
ছকুঃ --সজিবের মাও সজিবরে আর একটা রুটি দেও দেহি ।ছেরাডার চেহারা কেবা যিন হয়য়া যাইতাছে....
.
ছকুর বউ শুধু ছকুর দিকে তাকায় কিন্তু প্লেটে রুটি দেয় না ।বুঝতে পারে ছকু মিয়া ।ঘরে যে আর রুটি নাই ।তার পরে চুপ করে উঠে আসে ছকু মিয়া ।তার দরিদ্রতা কি দুর হবে না? ভাবতে ভাবতে প্রতিদিনের মত আবার সকাল.... ।
.
সকালে ছকুর বউঃ --সজিব বেটা... ও সজিব...বাবা... সকাল হইছে এহোন ওঠো দেহি ।খাইয়া লও বিলে যাওয়া লাগব মাছ ধরবার ।বলেই হাত দেয় সজিবের শরীরে ।
.
-- একি জ্বরে যে ছেঁরার গা পুইরা যাইতাছে... ।
চেঁচামেচি শুরু করে ছকুর বউ ।ছকু দৌড়ে আসে বাইরে থেকে ।
.
ছকুঃ --এত চেঁচাইতেছো কেন কি হইছে ?
--ও সজিবের বাঁপ সজিবের গায়ে তো খুব জ্বর, কথাবার্তাও কইতাছে না ।কিছু একটা করো ।আমার ছাওয়াল ডারে বাঁচাও...
.
বিষন্ন মনে ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে ছকু মিয়া ।কি করবে বুঝতে পারছে না ।ঘরে যে ডাক্তার দেখানোর টাকাটাও নাই ।
.
শেষপর্যন্ত কবিরাজের সরণাপর্ণ হয় ছকু তার ছেলেকে নিয়ে ।কবিরাজ সজিবের নারি পরিক্ষা করে বিভিন্ন গাছামো ঔষধ দেয় ।কারণ সজিবের আবারও ছোটবেলার সেই কালা জ্বর জাগ্রত হয়েছে ।
.
কয়েক দিন চলে যায় তবুও অসুখ ভাল হচ্ছেনা ছকুর ছেলের ।বরং আরো অবস্থা খারাপের লক্ষ্যণ দেখা যায় ।ছকুর বউ তো ছেলের চিন্তায় খাওয়া দাওয়া প্রায় ছেড়েই দিয়েছে.... ।
.
ছকু মিয়া এইবার স্থির হয় আর কবিরাজ না । এইবার যেভাবেই হোক ডাক্তারের নিকট নিতে হবে ।কিন্তু একটা দূর্বলতা আবারও বাধা দেয় তাকে, তা হল দারিদ্রতা ।
.
এইবার ছকু মিয়া এলাকার ধনী ব্যক্তিদের কাছে যায় টাকার জন্য... ।তাদের উক্তিঃ-
ছকুঃ ---মিয়া সাব আমার পোলাডা কয়েক দিন ধইরা জ্বরে পরছে ।কাছে টেকা নাই তাই ডাক্তার দেহাইতে পারতাছিনা ।আফনে যদি কয়ড়া টাকা ধার দিতেন তাইলে পোলাডারে বাঁচাইতে পারতাম... ।
.
আবুল মিয়াঃ --ছকু মিয়া ! আমি পারতাছিনা সামনে আমার টেকার অনেক কাজ ।তুমি কবিরাজ দেখাও গে... ।
.
কাশেম বেপারীঃ --ছকু এহোন জ্বালাইস না ।হিসাব মিলাইতে দে ।কাইল বাড়িতে মেহমান আইবো ।অন্য জায়গায় দেখ... ।
.
রাজ্জাক মোল্লাঃ --ছকু এহোন এইখান থাইকা যা তো ।কানের কাজে ঘেন ঘেন করস না ।মোর জ্বালায় বাঁচিনে আবার তুই ।
.
এই ভাবে বেশ কয়েক জায়গায় ঘুরে ছকু খালি হাতে বাড়িতে ফিরে ক্লান্ত শরীর নিয়ে ।বাড়ি এসে সে যা দেখে তা বলার মতো না... ।
.
অনেক মানুষের ভিড় বাড়ির উঠানে ।দৌড়ে যায় সে ।মানুষকে পাশ কাটিয়ে সামনে গিয়ে দাঁড়ায় ।
.
ঘরের বারান্দার খুঁটির সাথে হেলনা দিয়ে এক পলকে তাকিয়ে বসে আছে তার বউ।আর তার ছেলে সজিব শুয়ে আছে মায়ের পাশে ।কিন্তু দেহের ভিতরের সেই পাখি উড়াল দিয়ে চলে গেছে দূরে,অনেক দূরে যেখান থেকে আর ফিরে আসবে না ...।
.
প্রশ্নঃ তারা কি পারতো না ?ছকু মিয়া যাদের কাছে সাহায্য চেয়েছিল ।নাকি তারা ঞ্জন বিহীন ।তারা অবশ্যই পারতো কিন্তু করেনি ।এটা তাদের পশুত্তের পরিচয় ।
.
"এটা কল্পনিক গল্প হলেও এই রকম হাজারো ঘটানা ঘটে চলেছে আমাদের সোনার দেশে ।আসুন আমরা সচেতন হই আমাদের সচেতনতাই পারে অনেকের প্রাণ রক্ষা করতে... ।"

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Jubayer Hosen Jr.. Blogger দ্বারা পরিচালিত.

Translate