নির্যাতিত অনু

______ গল্পঃ নির্যাতিত অনু  ______
লেখকঃ Jubayer Hosen Jr.
.
- গ্রামের নাম পুঠিমারী ।সেই গ্রামেই বাস করতেন রহিম নামের এক ফেরিওয়ালা ।গরিব মানুষ ।কোন রকম সংসার চলত ।একদিন কাজ না করলে পেটে ভাত পড়ত না ।
.
সেই পরিবারেই জন্ম নিল তিন তিনটি মেয়ে সন্তান ।বড় মেয়েটির নাম ছিল অনুপমা ।সকলে তাকে ছোট করে অনু বলে ডাকত ।
.
পরিবারে খুব অভাব ।তার উপর তিন বোন ।লেখাপড়ার সুযোগও পেল না অনু ।মাত্র নয় বছর বয়সেই তাকে শহরে পাঠানো হলো কাজের মেয়ে হিসেবে ।
.
মস্ত বড় বাড়ি ।বেতনও পাবে ১হাজার টাকা ।সেখানেই তার বাল্য জিবন কাটতে থাকল কাজের ভেতরে দিয়ে ।কিন্তু মাঝে মাঝে মারপিট খেতে হতো তাকে ।
.
এই ভাবে তিন বছর চলে যায় ।কিন্তু এত বছর পর সামান্য একটা অপরাধে তাকে মেরে সেই বাসা থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয় ।
.
কি আর করবে বেচারা অনু ।মার খেয়ে বাসা থেকে কাঁদতে কাঁদতে বেড়িয়ে আসে ।কি করবে বুঝতে পারছে না ।
.
রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে থাকে অনু ।বাড়ি যাবার টাকাও কাছে ছিল না ।তাড়ায়ে দেওয়ার সময় বাঁকি পাওনা টাকা টাও দেয়নি ।
.
যদিও বয়স এখন মাত্র ১২ বছর ।তবুও রাস্তার কুকুর গুলো যেন ছিঁরে খাচ্ছিল ।যেখানেই যায় অসথ মানুষের আড্ডা ।
.
সব প্রতিকুলতা পেরিয়ে সে আবারও নতুন চাকরি খুঁজতে থাকে ।কিন্তু কোথায়ও আর চাকুরি জোটে না ।অবশেষে এক বাসায় তার চাকরি হয়ে যায় ।বেতনও আগের চেয়ে বেশি ১৫ শত টাকা ।
.
সেখানেও বড় বড় কর্তা কর্তী ।কোন কাজ-কর্মে একটু ক্রুটি হলেই মার খেতে হয়।কিন্তু গরিব অসহায়দের কাছে ঐটাই অনেক সুখ ।দু বেলা ভাত তো কঁপালে জুটছে ।আবার বেতনের টাকা থেকেও গ্রামের বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা মাকে কিছু দিতে পারছে ।
.
ঐ খানেও চলে যায় আরো ৪ টা বছর ।এখন অনুর বয়স ১৬ বছর ।চেহারা তো খারাপ ছিল না ।তাই দেখতেও অনেক সুন্দর হয়েছে ।
.
ইতিমধ্যে ঐ বাসায় নতুন ভাড়াটে আসল ।সাথে আসল তাদের এক সন্তান ।১৯ বছরের যুবক ।ছেলেটা তেমন সুবিধার ছিল না ।বিভিন্ন ধরনের নেশা করতো ।
.
বাসায় আসতেই অনু দিকে নজর যায় ছেলেটির ।অনু দিকে খারপ দৃষ্টি ভঙ্গি দেখাতে থাকে ।অনেক সময় তাকে নিকৃষ্ট কথাও বলত ।
.
এক সময় তাকে ধর্ষনের চেষ্টা করে ছেলেটি ।কিন্তু  সে তার সম্মান রক্ষাতে কোন রকম পালিয়ে আসে সেখান থেকে ।
.
কিন্তু পালিয়ে আর কোথায় ?রাত ১১ টা বাঁজে ।জনশূন্য রাস্তা ।এই সময় রাস্তায় ভবঘুরে মাতালরা ছাড়া ভাল লোক খুব কমই থাকে ।
.
আর এই বার অনু পড়ল সেই ধরণের লোকের খপ্পরে ।কি করবে বুঝতে পারছে না ।আর কত পালানো যায় ।ঘুরতে ঘুরতে অনু এখন ক্লান্ত ।চোখ ঘুমে বন্ধ হয়ে আসছে ।
.
তাই সে একটা ফাঁকা জায়গায় অথ্যাত্‍ এক বাড়ির বেলকুনীতে এসে বসল ।বাড়িটা ছিল রাস্তার সাথে ।মাঝে মাঝে দুই একটা গাড়িও আসত সেই রাস্তায় ।
.
আর এবারও এক লোকের খপ্পরে পড়ল ।অনু কি করবে বুঝতে পারছে না ।দৌড়ে যেই পাশ কাটিয়ে বেড়িয়ে রাস্তায় পা রাখল ।
.
কোথায় থেকে এক মালবাহী ট্রাক এসে উড়িয়ে নিয়ে গেল অনুর শরীরটাকে ।ধাক্কা খেয়ে পড়ল রাস্তার পাশে ।রক্তাক্ত শরীরে পড়ে রইল অনু ।
.
হয়ত এতক্ষণে তার প্রাণ পাখি উড়ে চলে গেছে ।সেই না ফেরার দেশে ।যেখানে গেলে কেউ আর ফিরে আসে না ।
.
যতক্ষণ দেহে প্রাণ ছিল কতজন তাকে পাশে চেয়েছে ।কিন্তু যখন তার দেহ থেকে প্রাণটা চলে গেল তাকে দেখার কেউ নেই ।পড়ে রইল তার মরা দেহ রাস্তার পাশে ..... ।
.
লেখকঃ এই ভাবেই কি নির্যাতিত হবে এ দেশের অসহায় মানুষ গুলো ?
তাদের কি সুন্দর ভাবে বাঁচার অধিকার নেই ?
আসুন আমরা সচেতন হই ।আমারাই পারি এর দমন করতে ।