শুক্রবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৫

নিষ্ঠুর ভালবাসা


_____নিষ্ঠুর ভালবাসা_____
  লেখকঃ Jubayer Hosen Jr.
.
লেখালেখির কাজেই এখন সর্বক্ষণ ব্যস্ত থাকে জুবায়ের ।বয়স তো আর কম হল না । দুই একটা চুলও সাদা হয়ে গেছে মাথার ।কিন্তু এখনও অবিবাহিত ।হয়তো বিয়ে করার ইচ্ছে আর তার নেই ।
.
থাকেই বা কি করে যাকে ভালবেসে ছিল তাকে তো পেলনা জিবন সঙ্গী হিসেবে । .
.
-অন্য কাউকে বিয়ে করলে হয়ত সেই জায়গা দিতে পারবে না ।তাই বিয়ের কথা ছেড়ে দিয়েছে জুবায়ের ।
.
-বাদ দিই সেই সব কথা ।
.
-লেখালেখির বিষয় নিয়েই হয়ত কোন এক ব্যাক্তির সাথে দেখা করতে ঢাকায় যাবে জুবায়ের।সম্ভবত কোন এক ফেসবুক ব্লগারের সাথে ।
.
হরতালের দিন ! তাই তাকে ট্রেন পথে রওনা দিতে হচ্ছে ।একটা টিকিট কেঁটে ভিতরে গিয়ে বসল এক কেবিনে।
.
.
বসেই সে তার সেই প্রথম লিখা গল্পের বইটা হাতে নিয়ে পড়তে লাগল ।সে এই গল্পে কি পায় জানি না ! তবে জুবায়ের প্রত্যেকটি গল্প লিখার আগে এই গল্পটা পড়ে নেয়।
.
.
গল্পটার নাম ছিল- "ভালবাসার শেষ পরিণতি"।
.
.
গল্পটায় তেমন কোন সম্মান পায়নি সে,তবুও যেন এটা তার এক সম্বল । যাই হোক সে ট্রেনে বসেই সেই গল্পটা খুব মনযোগের সাথে পড়তে লাগল ।হয়ত নতুন কোন গল্পের স্বন্ধান খুঁজছে জুবায়ের ।
.
.
এমন সময় এক মেয়ে কন্ঠের আওয়াজ আসল তার কানে ।
--একটু সরে বসবেন ।
--জুবায়ের সেই দিকে খেয়াল না করেই একটু সরে বসে আবার গল্প পড়ায় মনযোগ দিলেন ।
.
.
মেয়েটি ছিল বিবাহিত সাথে ৭-৮ বছরের একটি শিশু ।হয়ত মেয়েটারই বাচ্চা ।
.
.
সিটে বসার কিছুক্ষণ পর মেয়েটির চোখ যায় সেই গল্পের বইটার দিকে,যেটা জুবায়ের তখনও মনযোগ দিয়ে পড়ছে ।
.
.
মেয়েটি লুকিয়ে তার পাশাপাশি গল্পটি পড়তে লাগল ।গল্পটির কেন্দ্রীয় চরিত্রের নাম ছিল-'জুবায়ের ও পাখি' ।
.
.
গল্পটি পড়তেই মেয়েটির চোখে পানি এসে গেল এবং মেয়েটি জুবায়ের এর দিকে তাতক্ষণাত্‍ তাকাল ।
---একি এ তো জুবায়ে... ।
.
-বলতেই থেমে গেল ।
.
জুবায়ের তার নামের অর্ধশব্দ শুনতেই মেয়েটির দিকে তাকাল ।
--কে মেয়েটি ?
--চেনা লাগছে? কোথায় দেখেছি একে ? তখনও মেয়েটির চোখ পানিতে টলমল করছে ।
.
.
কিছুক্ষণ চেয়ে থাকার পর চিনতে পারল জুবায়ের-এতো পাখি(মনে মনে বলল)।যাকে নিয়েই তাই প্রতিটি গল্প রচনা হয়েছে ।যে মিশে আছে তার গল্পের প্রতিটি লাইনে ।
.
.
মেয়েটি সরু গলায় বলল,জুবায়ের চিনতে পেরেছ আমায়?আমি তোমার সেই পাখি ।যাকে তুমি তোমার পুরোটা হৃদয় দিয়ে ভালবেসে ছিলে ।
.
. কিছুক্ষণ নিরব থাকার পর জুবায়ের সেই ৭-৮ বছর বয়সের বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে বলল,তোমার বাচ্চা তাই না ?দেখতে অনেক সুন্দর হয়েছে,ঠিক তোমার মতো ।
.
.তা তুমি একা তোমার হাসবেন্ড কোথায়?
.
.
কথাটা পাখির কানে যেতেই যে তার বুকটা ফেঁটে গেল ।তার চোখে অঝর পানি ঝরতে লাগল ।
.
.
জুবায়ের তাকে আবার জিঙ্গাসা করল কি হয়েছে?দয়া করে খুলে বল আমায়।
.
. কি আর বলবে হতভাগী পাখি ।জিবনে যাকে সবচেয়ে বেশী ভালবেসে ছিল ।তাকে ছেড়ে বাবা মায়ের ইচ্ছেয় বিয়ে করতে হল অন্য কাউকে ।কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলনা পাখি ।তবুও সেই বাস্তবতা মেনে নিতে হয় পাখিকে ।
.
.
আর যখন তাকে নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করে পাখি -আর ঠিক তথনই ২ বছরের বাচ্চা রেখে চলে যেতে হয় তার স্বামীকে ।
.
.
সেই না ফেরার দেশে ।যেখানে গেলে আর কেউ ফিরে আসে না ।
.
.
জুবায়ের তখনও তার দিকে চেয়ে থাকে তার প্রশ্নের উত্তরের আশায় ।কিছুক্ষণ পর পাখি তার জীবনের ইতিহাস খুলে বলে জুবায়েরকে ।
.
. --অবশেষে পাখি জুবায়ের কে একটা কথা বলে পরের স্টেশনে নেমে পরে তা হল -
.
. --আগেও তোমাকে যতটা ভালবাসতাম এখনো ততটাই ভালবাসি ।
.
. তার পর নেমে চলে যায় পাখি ।
.
. জুবায়ের এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে তার দিকে যত দূর দেখা যায় ।
.
 -আর জুবায়েরের মোটা ফ্রেমের চশমার ফাঁক দিয়ে গড়িয় পড়ে পানি ।আর জানালা দিয়ে আসা বাতাসে তার ডায়রির পৃষ্টা উলটে যেতে থাকে ।
.
.
 জুবায়ের মনে মনে বলতে থাকে ভালবাসা কি এই রকম নিষ্ঠুর সব সময়.....?

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Jubayer Hosen Jr.. Blogger দ্বারা পরিচালিত.

Translate